বাংলাদেশের জয় এবং গোলকধাঁধার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট


মাসুদ হিমন, ক্রিড়া ডেস্ক। 

নড়বড়ে ব্যাটিং, তথৈবচ ফিল্ডিং, মুস্তাফিজ - সাইফুদ্দিনদের ম্যাড়ম্যাড়ে বোলিং৷ কপালগুণে এক জয়ে মান রক্ষা বাংলাদেশের। আইসিসির সহযোগী সদস্য আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে জিততেই ঘাম ছুটে গেলো বাংলাদেশ দলের প্লেয়ারদের। এ যেন হাফ ছেড়ে কোন রকম এক চিলতে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া৷ এমন জয়ে আদৌও প্রশান্তির খোঁজ মেলে! অথচ, দিব্যচোখে ধরা পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অপরিকল্পনা এবং ক্রিকেটারদের সামর্থ্যের অভাব।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট - ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ বরাবরের মতোই সাধারণ মানে সাদামাটা এবং গড়পড়তা দল। বাংলার ক্রিকেটের ব্যর্থতার পুরো আনা এখানেই। কালেভদ্রে দুই একটা ফ্লুক বাদ দিলে আমাদের অর্জনের হিশেব শূণ্যে। রিক্তহস্তে ঘুরে বেড়ানো এক যাজক দল। যাদের অর্জন বলতে কিছু নেই। সফলতার চৌকাঠ মাড়ানোর সাধ্যে যেন নেই। ইতিহাস বলে হংকং এর মতো দলের সাথে পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছি আমরা এই ফরম্যাটে। বছরের পর বছর যায়, কিন্তু সাফল্য আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ বিশ ওভারের খেলাটাই যেন রহস্যময় এক গোলকধাঁধা বাংলার ক্রিকেটারদের জন্য।

আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে রীতিমতো ধুঁকতে হয়েছে বাংলাদেশের প্লেয়ারদের। সাব্বির রহমানের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। কি বুঝে শর্ট লেংথের ওই বলটায় ব্যাট চালালেন সেটার উত্তর সাব্বিরের কাছেই। পাওয়ার প্লতে এমন দৃষ্টিকটু ক্রিকেটীয় শর্ট সব যুগেই বড্ড বেমানান সেটা বুঝাই যেন সাব্বিরদের জন্য রকেট সায়েন্স। ইয়াসির্র আউটটা যেমন অবিশ্বাস্য তেমনি লিটনের এপ্রোচটাও। নিষ্প্রাণ এবং গুগলিতে ইয়াসিরের বোল্ড হওয়াটা প্রশ্ন তুলে ব্যাটারের লাইন লেন্থ জ্ঞান নিয়ে। প্রশান্তির জায়গাটা শুধু আফিফ সোহানের জুটিতে। নয় ওভারে তাদের ৮১ রানের পার্টনারশিপটাই এই ম্যাচের অর্জন। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হিশেবে ধরা যায় দুই রানে আফিফের ক্যাচ ফেলে দেওয়া এবং শেষ বলে সোহানের ছক্কাটা।

রান চেজের জন্য দুবাইয়ের মাঠগুলো বরাবরই পয়মন্ত। যা আমরা দেখতে পেয়েছি সদ্য ঘটে যাওয়া এশিয়া কাপে। বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৮ রানের টার্গেটেটা বেশ মামুলী'ই বানিয়ে ফেলেছিলো আরব আমিরাত। ম্যাচের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মনে হচ্ছিলো বাংলাদেশ হারতে যাচ্ছে। তবে, মেহেদী মিরাজের দারুন ইমপ্যাক্টে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। কিছুদিন আগে দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীরাম বলেছিলাম তার কাছে ইমপ্যাক্টটাই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কথার যথাযথ নিদর্শন মিরাজের বেকথ্রু এবং অতিমানবীয় দুটি ক্যাচ।

অপরদিকে মুস্তাফিজ - সাইফুদ্দিনরা যেন নিজের হারিয়ে খুঁজছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুস্তাফিজ শেষ কবে ম্যাচ উইনিং পারর্ফম করেছেন সেটা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। রেকর্ড বলে বিদেশের মাটিতে মুস্তাফিজ বরাবর'ই বিবর্ণ গত কয়েক বছর ধরেই। ডেথ ওভারে আগুনঝরা বোলিং করা মুস্তাফিজ এখন বেশ রঙহীন। সাইফুদ্দিন কবে ব্রেন খাটিয়ে বোলিং করেছেন সেটা বের করা বেশ দুষ্কর। কোন ট্যাক্টিস নেই, তাড়না নেই, প্যাশান নেই। এমন বোলিং দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা শুধু এই বঙ্গেই সম্ভব।

ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছে। কিন্তু আরব আমিরাতের মতো দলের বিপক্ষে হারতে হারতে জিতে যাওয়া কতটুকু স্বস্তিদায়ক! সামনে রয়েছে ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং বিশ্বকাপের মতো আসর। এই মেগা ইভেন্টের জন্য বাংলাদেশ কি প্রস্তুত আদৌও। লিটন মিরাজ আফিররা কি নিজের প্রস্ফুটিত করতে পারবে বিশ্বমঞ্চে। বোর্ড এবং দল নিয়ে আমাদের অনেক আক্ষেপ। শত সহস্র আক্ষেপের মাঝে দাঁড়িয়ে আমরা বাংলাদেশের স্লোগান ধরি। বোধোদয় হোক এদেশের ক্রিকেট হর্তাকর্তা এবং ক্রিকেটারদের।

0/একটি মন্তব্য / মন্তব্য পোস্ট করুন