মুদ্রাস্ফীতি রুখতে স্বর্ণমুদ্রার পথে জিম্বাবুয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক;

ছবি : সংগৃহীত


দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে চলছে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি। বর্তমানে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে। ফলে মান কমেছে স্থানীয় মুদ্রার। অর্থনীতির এই বেহাল দশায় পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির সরকার বৈধ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণমুদ্রা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । স্থানীয় মুদ্রায় ও মার্কিন ডলারে কেনা যাবে স্বর্ণমুদ্রা। চলতি মাসের শেষ নাগাদ এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছে জিম্বাবুয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই খবর উঠে এসেছে।


গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, জুনে জিম্বাবুয়েতে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি। দেশটিতে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১৯১ শতাংশ, যা ২০০০ সালের মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টিই স্মরণ করে দিচ্ছে। ওই সময় দেশটির মুদ্রার মান তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছিল। যদিও অবশেষে ২০০৯ সালে মুদ্রাটি একেবারে পরিত্যক্ত করা হয়।


দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জন ম্যাংগুদা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, স্বর্ণমুদ্রা বিনিময় মূল্য হিসেবে কাজ করবে এবং এটি দেশে মার্কিন ডলারের চাহিদা হ্রাস করবে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মুদ্রার মূল্য অনেক কমে গেছে।


ম্যাংগুদা আরও বলেন, স্থানীয় মুদ্রা এবং মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা উভয় দিয়েই এই স্বর্ণমুদ্রা জনগণের কাছে বিক্রি করা যাবে। সেক্ষেত্রে স্বর্ণমুদ্রার দাম প্রচলিত আন্তর্জাতিক মূল্য এবং উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে।


এই স্বর্ণমুদ্রার নামকরণ করা হবে জলপ্রপাত ‘ভিক্টোরিয়া ফলস’ বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘মসি-ওয়া-তুনয়ার’ নামানুসারে। এ মুদ্রায় স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক নগদ মুদ্রাও ভাঙানো যাবে, যা দিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্য করা যাবে।


বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জিম্বাবুয়ের ওই স্বর্ণমুদ্রায় এক ট্রয় আউন্স (৩১ গ্রামের বেশি) স্বর্ণ থাকবে। এগুলো বিক্রি করবে দেশটির ফিডেলিটি গোল্ড রিফাইনারি, অরেক্স ও স্থানীয় ব্যাংকগুলো।


উল্লেখ্য, জিম্বাবুয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নাগরিকের আস্থা সংকট রয়েছে। কারণ, এর আগে আর্থিক কর্তৃপক্ষ বিশ্বাসযোগ্যতা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ফলস্বরূপ ক্যাশের বিনিময়ে কয়েন বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বাসিন্দাদের মাঝে। অনেকেই আস্থা রাখতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। 


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টার্গেট অনুযায়ী নাগরিকরা গোল্ড কয়েন না কিনলে আটকে থাকবে স্থানীয় মুদ্রা। এটি সরকারের আরেকটি ব্যর্থ পদক্ষেপ হতে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।


২০০৮ সালে দেশটি ১০০ বিলিয়ন ডলার (জিম্বাবুয়ে) নোট বাজারে আনে। জিম্বাবুয়ের ডলারের ভয়াবহ পতনের ফলে লোকজন ব্যাংকে অর্থ রাখা বাদ দিয়ে বাড়িতে অর্থ জমাতে শুরু করেন। ২০০৯ সাল থেকে মুদ্রাস্ফীতিতে জর্জরিত ডলার থেকে সরে আসে জিম্বাবুয়ে। এর বদলে মার্কিন ডলার নির্ভরশীল হয়ে পড়ে দেশটি। ২০১৯ সালে আবার স্থানীয় মুদ্রা চালু করা হয়। তবে সেটিও দ্রুত মূল্য হারায়।

0/একটি মন্তব্য / মন্তব্য পোস্ট করুন