তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও জুয়ার থাবা থেকে বাঁচাতে খেলার মাঠের কোনো বিকল্প নেই
তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও জুয়ার থাবা থেকে বাঁচাতে খেলার মাঠের কোনো বিকল্প নেই
ঘড়ির কাটা চলছে একই নিয়মে,পুরিয়ে যাচ্ছে সময়,তেমন করে নদীর স্রোতও চলছে,থেমে নেই কিছুই।জীবন থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে বয়স। তরুণদের অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি,প্রত্যাশার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে পুরিয়ে যাচ্ছে সময়।
তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রতিটি দিনই নতুন নতুন কিছু প্রত্যাশা জন্মাই।তাই তারুণ্যের প্রত্যাশার পাল্লাটাও একটু ভারী।আমরা যখন নতুন কিছু নিতে যাই,তখন সবসময় ভালোটাই চাই।অতীতের সব ভুল-ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে আমরা পেতে চাই একটি সুন্দর আগামী।আমরা সকলেই জানি পরিকল্পনা ছাড়া কোনো-কিছুই সঠিকভাবে সফল করা যায় না। তাই নতুন প্রত্যাশাটা শুরু করতে হবে সুন্দর পরিকল্পনা দিয়ে।আর এই পরিকল্পনায় রাখতে হবে সবাইকে।দরিদ্র,মধ্যবিত্ত,ধনী সকলের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে সমানভাবে।তবে মনে রাখতে হবে চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে যদি বিস্তর ব্যবধান থেকে যায়,সেই চাওয়ার আর মূল্য থাকে না। তাই নতুন সকলের প্রত্যাশাগুলো যেন প্রাপ্তিতে সমাপ্ত হয় সেটা মাথায় রেখে কাজ শুরু করতে হবে।
সেই সাথে বর্তমান সরকারের ভাবনায় রাখতে হবে এ প্রজন্মের চাওয়াগুলো।তরুণদের প্রত্যাশা যদি প্রাপ্তিতে পরিণত হয় তবে দেশটা হবে অনেক সুন্দর এবং গোছানো।তরুণদের নিয়ে সোনার বাংলা সাজাতে হবে সরকারকে।দেশের উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই তরুণদের সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে। সেইসাথে বেকার তরুণ যুবকদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে।
শুধু তা-ই নয়, আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, একটা দেশের মূল চালিকাশক্তি এবং ভবিষ্যৎ হচ্ছে তরুণরাই।সোনার বাংলা গড়ার কারিগর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ বয়সে দেখিয়েছেন তরুণরা কতটা করতে পারে দেশের জন্য।আমরা বঙ্গবন্ধুর তারুণ্যের সময়কাল দেখলেই জানতে পারব তরুণ বঙ্গবন্ধু কতটা সফল ছিলেন।সেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বর্তমান তরুণ প্রজন্মও সফল হতে চায়। এজন্য তারুণ্যের চাওয়াগুলো প্রাধান্য দিতে হবে সকলের।
তারুণ্যের চাওয়াগুলো নিয়ে যদি কথা বলতে হয় তবে প্রথমেই উঠে আসবে বেকারত্ব।এ প্রজন্মের সবচেয়ে বড় হতাশা আর দুঃখের কারণ হচ্ছে বেকারত্ব।বাংলাদেশে যতগুলো সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব।বেশী অবাক হতে হয় তখন,যখন আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকার অধিক।বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ থাকলেও বাস্তবে এ সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে যে পরিমাণ বেকার ছেলে-মেয়ে রয়েছে সে পরিমাণ এখনো কর্মসংস্থান নেই।এটি আমাদের জন্য বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।বেকারত্ব দূর করতে হলে সর্বপ্রথমে পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।এটাই এপ্রজন্মের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে তারা চলে যাচ্ছে ধ্বংসের পথে। তাদের এই ধ্বংসের পথ থেকে সরিয়ে আনার জন্য অবশ্যই বেকারত্ব দূর করতে হবে।অনেকে পেটের জন্য অবৈধ পথ বেঁচে নিতে কোনো প্রকার চিন্তা করছে না।কেউ মাদক,কেউ জুয়া,কেউ ইয়াবাসহ নানান রকমের নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়ে ধ্বংস করছে নিজেদের জীবন।আর তাদের এ ধ্বংসের কারণ হচ্ছে বেকার জীবন।বেকারত্বই সকল ধ্বংসের মূল।
বেকারদের চাকরি না পাওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে ঘুষ।স্বজনপ্রীতি আর টাকায় এখন চাকরি পাওয়া যায়।বাবা, চাচা, মামা, খালু না থাকলে আজকাল চাকরিতো দূরের কথা চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়ে।বাস্তবতা অস্বিকার করার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই।
পড়ালেখা শেষ করে যদি একজন শিক্ষিত ছেলে তার যোগ্যতানুসারে একটি চাকরি না পায়,তবে সে ছেলেটি দেশের জন্য বোঝা হবে তো বটেই অনেক সময় দেশের জন্য ক্ষতিকর কারণ হয়েও দাঁড়াবে। এই যুব সমাজকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে সকলের।দেশের প্রতিটি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে বেকার যুবকদের।বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের সকলের এক হতে হবে। সরকার এবং দেশের বিত্তবানদের এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দিতে হবে।বেকার যুবসমাজ পাচ্ছে না কোনো চাকরি,মেটাতে পারছে না পরিবারের চাহিদা।বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে অবৈধ পথে।চলে যাচ্ছে ধ্বংসের পথে।যে পথে থাকে না কোনো সুখ,কিন্তু থাকে কালো টাকা।কেউ জঙ্গি, কেউ সন্ত্রাসী এভাবেই চলে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে।আসলে এর জন্য দায়ী এই সমাজ।
এ ছাড়া আমাদের দেশে আজ খেলার মাঠের বড় সংকট।একটি শিশুর বেড়ে উঠার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি তা হচ্ছে খেলাধুলা।এ ছাড়া খেলাধুলা তরুণ এবং যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখে।কিন্তু সারাদেশে খেলার মাঠ যেন দিন দিন কমেই যাচ্ছে।বলা-যায় এখন খেলার মাঠ খুব বেশি নেই।প্রতিটি খালি জায়গা এখন দালান-কোঠায় রূপান্তরিত হচ্ছে।খালি কোনো জায়গা নেই,যেখানে বাচ্চারা খেলবে এবং দৌঁড়াবে। পক্ষান্তরে কিন্তু লোকসংখ্যা বাড়ছে।এতে করে শিশুর সংখ্যাও বেড়ে চলছে।ভবিষ্যতে এই শিশুরা মাঠ কোথায় পাবে সেটাও বড় চিন্তার বিষয়।
এখন তরুণ ছেলেরাও খেলার জন্য মাঠ খুঁজে পায় না।মাঠ আছে শুধু জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য।কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য তৈরী হতে যে আগে খেলতে হয় সেটা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি।বড় বাজেটের নতুন নতুন স্টেডিয়াম হচ্ছে।কিন্তু এদিকে শিশু,তরুণ,যুবকরা খেলার জন্য মাঠ খুঁজেও পায় না।ছোট ছোট খালি জায়গায়ও অনেক সময় ছেলে মেয়রা ক্রিকেট,ফুটবল খেলে। কারণ তাদের ভেতর খেলাধুলার ইচ্ছা এবং আগ্রহ রয়েছে।কিন্তু সেই ইচ্ছা এবং আগ্রহ একদিন মাঠের অভাবে হারিয়ে যাবে এসকল শিশুদের। আর তরুণ এবং যুব সমাজ হয়ে উঠবে ফেসবুক এবং মাদক নির্ভর।কারণ খেলাধুলা খেলতে না পারলে বিকেলের অবসর সময় তারা নানাভাবে নিজেদের জড়িয়ে ফেলতে পারে।এর মধ্যে মাদকাসক্ত ও জুয়া অন্যতম।মাদক ও জুয়া থেকে তাদের বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনকে এই বিষয়ে নজর দিত হবে। আমরা মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য কতই স্লোগান এবং আন্দোলন করি, কিন্তু বাস্তবে মনে হয় আমরা যেন মাদকের পক্ষ নিয়ে কাজ করি।
তরুণদের জন্য প্রতিটি এলাকায় একটি করে উন্মুক্ত খেলার মাঠের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও জুয়ার অগ্রসর থেকে বাঁচাতে চাইলে খেলাধুলায় উৎসাহি করে তুলতে হবে।আর এই খেলাধুলার জন্য মাঠের বিকল্প নেই।আমরা যদি আশপাশে লক্ষ করি,তাহলে দেখতে পাব তারাই ভালো আছে যারা খেলাধুলা করে।
কিন্তু এই খেলাধুলার মাঠ না থাকলে শিশু এবং তরুণ সমাজ একদিন হুমকি হয়ে দাঁড়াবে দেশের জন্য। আগামী দিনের ভালো মানের খেলোয়াড় খুঁজে পাবে না বাংলাদেশ।সেদিন বেশী দূরে নয়,যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে মাঠ তাতে মনে হয় অতিসন্নিকটে আমাদের দেশে ভংকর রুপ নিবে।তাই আসুন আমরা সকলেই এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখি এবং খেলার মাঠ তৈরী করে দিই শিশু ও তরুণদের।
তা ছাড়া আমাদের দেশে বর্তমানে মাদকের ছড়াছড়ি।আমাদের যদি সমাজকে মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে হয় তাহলে বন্ধ করতে হবে মাদক ব্যবসা।তা না হলে মাদকের রাজত্ব আজীবন থেকে যাবে।আর সমাজে অনৈতিকতার প্রসার বৃদ্ধি পাবে।দিন দিন তরুণ তরুণী মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে।মাদকাসক্তির ৫৫ ভাগই বেকার এবং শিক্ষার্থী। যারা মাদকের অর্থ যোগাতে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল।আর এর কারণে পরিবারে নেমে আসে চরম অশান্তি।এরাই করে সমাজে নানান কুকর্ম। ছিনতাই সহ চুরি ডাকাতির কাজও করে এসব মাদকসেবীরা।মাদকের বড় একটা অংশ আসে মিয়ানমার সিমান্তবর্তী নাফ নদে মাছ ধরা জেলেদের মাধ্যমে। মিয়ানমার থেকে এভাবে চোরা পথে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক এসে নষ্ট করে দেয় তরুণ প্রজন্মের জীবন। আর এই ব্যবসায় জেলেরাও অতিরিক্ত আগ্রহ দেখায়, কারণ নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পরে মাদকই সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা।অনেকের মতে মাদক থেকে মাফিয়াদের আয়ের একটি অংশ বিভিন্ন দেশের কর্ণাধারদের পকেটে যায় সরাসরি অথবা নানান ছদ্মাবরণে।
আমাদের দেশের প্রতিটি স্থানেই এখন মাদকের ছড়াছড়ি সহ জুয়ার আসর।চাইলেই এখন খুব সহজেই মাদক সংগ্রহ করা যায় ও জুয়ার আসরে বসা যায়।ইয়াবা থেকে শুরু করে গাঁজা,মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ও জুয়া খেলা এখন তরুণ প্রজন্মের হাতের নাগালে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কোনো ভাবেই।সমাজে ভালো মানুষের মুখোশ পরে আড়ালে মাদকের ব্যবসা করাটাই এখন অনেকের আদর্শ,যা আমরা খালি চোখে দেখি না। তবে যারা দেখি তারাও বলতে পারি না তাদের ভয়ে।তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো দক্ষ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।দক্ষ না হলে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও মাদকের ছড়াছড়ি কখনো থামবে না।তরুণ প্রজন্মেও দিন দিন সে পথে অগ্রসর হতে থাকবে।তাই তরুণসমাজকে রক্ষা করতে হলে মাদকের ছড়াছড়িও ও জুয়ার আসর গুলো বন্ধ করতে হবে।এখন আবার অনেক তরুণরা ডিজিটাল জুয়া খেলে এন্ড্রয়েট মোবাইলের মাধ্যমে।যা অনেকেই দেখতে পাই না এবং বুঝতেও পারেনা।বর্তমানে এই জুয়া দেশ জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।অধিকাংশ বেকার শিক্ষার্থীরা এই জুয়াই লিপ্ত হয়েছে এবং হচ্ছে।এটি অনেকের কাছে ভীট নামে পরিচিত।এটি কে বলা হয় ডিজিটাল জুয়া,যা কেউ দেখতেও পায় না বুঝতেও পারে না-
এ ছাড়া আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার যে মহামারি লেগে আছে তা রুখতে হবে।
অপ্রাপ্ত,অদক্ষ,লাইসেন্সবিহীন ড্রাইবারদের কারণে প্রতিনিয়তই এমন দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ।সড়ক থেকে আইনি ভাবে তাদের প্রতিহত করতেই হবে,অন্যতাই সড়কে দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব না।মহেশখালীতে অধিকাংশ দূর্ঘটনা ঘটে ডাম্পার এবং টমটমে।দূর্ঘটনা ঘটার মূল কারণ অদক্ষ,অপ্রাপ্ত ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইবারদের কারণে।
গত কয়েকদিন আগে হোয়ানকের ধলঘাট পাড়ায় ০৯ বছরের এক শিশু এবং কিছুদিন পর আবারও বড়মহেশখালীতে সড়ক দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে ০৬বছরের আরেক শিশু।দুজনরই প্রাণ কেড়ে নেয় ঘাতক ডাম্পার।যার ফলে সে ঘাতক ডাম্পারের বিরুদ্ধ পদক্ষেপ নিয়ে রাত ১০টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলার ঘোষণা দেয় মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়াছিন।এর আগে চললে জনসাধারণ তাদের আটক করতে পারবে বলে ঘোষণা দেয় তিনি।কিন্তু অনেকেই তা মানছে না দেখা যাচ্ছে।তাই তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।ঝুঁকি মুক্ত নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা করতে হবে-
পরিশেষে বলতে চাই,তারুণ্যের চাওয়া এবং প্রত্যাশাগুলো যেন প্রাপ্তি দিয়ে পূরণ হয়।তবেই দেশ এবং দেশের মানুষ উপকৃত হবে।মনে রাখতে হবে,একটি দেশকে উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছাতে চাইলে সে দেশের তরুণ সমাজকে গুরুত্ব দিতে হবে।দিতে হবে তারুণ্যের মতামতকে প্রধান্য। তবেই সোনার বাংলা গড়তে পারবো আমরা-
লেখক,
ছাদেকুর রহমান
(উপ-দপ্তর সম্পাদক)
রিপোর্টার্স ইউনিটি মহেশখালী।
Post a Comment