শিক্ষাই এবং সচেতনতায় পিছিয়ে থাকা এলাকার নাম নয়াপাড়া

 


মহেশখালী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তরে হোয়ানক ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের অবহেলিত নয়াপাড়া নামের গ্রামটি নানান সমস্যায় জর্জরিত। ভোগান্তি ও দুদর্শা থেকে তারা কবে মুক্ত হবেন তা জানেনা কেউই। এ গ্রামটি অন্যান্য গ্রামের চেয়ে একেবারেই পিছিয়ে। হাতে গুনা কয়েকজন চাকুরীজিবী থাকলেও গ্রামের প্রায় সব মানুষই কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। দেশের নানান অঞ্চল ‘উন্নয়নের জোয়ারে’ ভাসলেও এর ছিটেফোঁটাও লাগেনি এই গ্রামে।


দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৫০ বছর। কিন্তু ‘নয়াপাড়া’ গ্রামটি দেখলে মনে হয়, এখানকার মানুষ বাস করছে কোনো ভিন্ন জগতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামটিতে রয়েছে প্রায় ১৮০০ উপরে ভোটার। নির্বাচন এলে প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে ভোট দেন তারা। কিন্তু পরিশেষে কেউ কথা রাখেনা।


জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য মতে নয়াপাড়া গ্রামটিতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৬৮০ জন লোকের বসবাস। এই গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য যে রাস্তা রয়েছে তা কাঁচা। গ্রামের পাশে বিদ্যুতের সাবষ্টেশন থাকলেও প্রচন্ড লোডশেডিংয়ের কারণে অন্ধকারের মধ্যে বসবাস করতে হয় মানুষদের। শিক্ষার হারের দিক থেকে এই গ্রামের মানুষ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।


জনশুমারি ও গৃহগণনা এর সুবাদে পুরা গ্রামটি ঘুরে দেখা হয়েছে। গ্রামটিতে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি কাঁচা থাকার ফলে চলাচলে গ্রামবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেননা যার সম্পূর্ণটাই কাঁচা রাস্তা। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়, যা জনগণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দেখলে মনে হবে রাস্তার ওপর কেউ হাল চাষ করেছে। এঁটেল মাটির কাদামাখা পথে পা রাখাই দায় হয়ে পড়ে।


এই গ্রামের এক সচেতন সদস্য বলেন,আমাদের নুন আনতে পান্তা পুরাই,নানান প্রতিকূলতা কারণে আমাদের সন্তানরা শিক্ষা অর্জন করতে পারছে না। অভাব অন্টন থাকার কারণে তাদের বাপ-দাদার পেশাই বেচেঁ নিচ্ছে।তবে যদি তাদেরকে যদি সচেতনতা বৃদ্ধি করা হতো শিক্ষার জন্য তখন তারা কষ্ট হলেও কৃষি পেশায় না জড়িয়ে কষ্ট করে হলেও শিক্ষা অর্জন করতে পারতো।শিক্ষিত হয়ে চাকুরী করতে না পারুক,যাতে ভালো একজন সচেতন মানুষ হতে পারে সে জন্য এ গ্রামে শিক্ষা বিস্তার করা প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের গ্রামে হাতে গুনা কয়েকজন ছেলে-মেয়ে স্কুল,মাদ্রাসা,কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।বাকিরা সবাই তাদের বাপ-দাদার পেশা (কৃষি)হাতে নিচ্ছেন।


তিনি আরও জানান, আপনাদের মতো আরও বহুবার মানুষ এসে গণনা করে গেছেন কিন্তু কখনো কেউ কিছু দেয়নি। এমন কি আমাদের এমন দূর্বল পরিবারে জনপ্রতিনিধিরাও কখনো কিছু দেয় নাই। অনেক কষ্টের মাধ্যমে চলছে আমাদের জীবন।


কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী জানান, ভোট এলে সব হয়ে যাওয়ার কথা শুনি তাদের মুখ থেকে। তখন আমরা আশায় বুক বেঁধে থাকি। তখন স্বপ্ন দেখি এবার মনে হয় গ্রামের প্রধান রাস্তাটিতে ইট বসানো হবে। ভোট চলে গেলে আর তা বাস্তাবে রূপান্তর হয় না। তারা এই পথ দিয়ে হেঁটেও যায় না।ঠিক আগের মতো কাঁচায় থেকে যায়।


এলাকার এক প্রবীণ বৃদ্ধ বলেন, ১৯৯৬ সালে থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমরা গ্রামের রাস্তাটিতে ইট বসানো হবে বলে শুনতেছি। কিন্তু ভোটের পার হলে আর তার বাস্তবায়ন হয়না। আসলে আমরা তো মানুষ না, চার পায়ের প্রাণী। তাই কিছুই হচ্ছে না।


তিনি আরও বলেন,কয়েক বছর আগে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসেছিলেন,এসে রাস্তাটি কিছু পথ হেঁটে বলে খুব দ্রুত সময়ে এই রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।কিন্তু দুঃখের বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার কিছুদিন পরই বদলি হয়ে গেছেন।এখন পর্যন্ত এসব মানুষের স্বপ্ন বুক বেঁধে রয়েই গেছে।এরপর এই গ্রামে নতুন কোন উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কোন কর্মকর্তা আসেনি।


ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনায় টয়লেট ব্যবহারের সুবাদে খানার সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিতে গিয়ে দেখা গেল। নয়াপাড়া গ্রামটিতে এখনো ৪০% লোক খোলা টয়লেট ব্যবহার করছে। স্লাবসহ চাকা বসানোর মতো অর্থ তাদের না থাকায় বসাতে পারছে না বলে জানান তারা।শুমারিতে তথ্য নিতে গিয়ে আরও দেখা গেল বয়স ৬০ এর ঊর্ধ্বে হওয়ার পরও এখনো অনেকেই পাচ্ছে না বয়স্ক ভাতা। তারা জানান জনপ্রতিনিধিদের কাছে গেলে বিভিন্ন কথা বলে ঘুরিয়ে দেয় আমাদের।


এত সমস্যার মাঝেও চলে যাচ্ছে সময়, দিন, মাস এরপর বছর। কিন্তু অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়াপাড়া গ্রামে আলো যেন পৌঁছায় না। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসের ফুলঝুরি থাকলেও নেই তার বাস্তবায়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশে যদি নয়াপাড়া গ্রামের বর্তমান অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড কতটুকু সফল হবে সে প্রশ্ন সবার। 


এমতাবস্থায় গ্রামটির সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের সুনজর কামনা করেন নয়াপাড়া গ্রামবাসী।


লেখকঃ

ছাদেকুর রহমান

উপ-দপ্তর সম্পাদক,

রিপোর্টার্স ইউনিটি মহেশখালী।

0/একটি মন্তব্য / মন্তব্য পোস্ট করুন