বিজয় হোক বিজয়ের"


'ইধার সো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার'অর্থাৎ 'এখানে ঘুমিয়ে আছে এক বিশ্বাসঘাতক'।

পাকিস্তানের করাচির মাসরুর বিমান ঘাঁটির চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে নিতান্তই অযত্ন আর অবহেলায় ফেলে রাখা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবরের সামনে লেখা ছিল কথাটি।

নিজের জন্মভূমিকে রক্ষা করতে প্রাণ হাতে নিয়ে টি-৩৩ যুদ্ধবিমান নিয়ে সূদুর করাচি থেকে দেশের উদ্দেশ্যে উড়াল দিয়েছিলো যে ছেলেটি তার নাম "বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান"।

চাকরী পেলে ছোট বোনকে বিয়ে দিবে বলে মাকে কথা দিয়ে আসা "মুন্সি আব্দুর রউফ" তার মাতৃভূমি রক্ষা করতে গিয়ে আর মাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলেন না।

বীরের মত ৭ টি স্পিড বোট ও ২ টি লঞ্চ সহযোগে চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি নৌপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে মর্টারের গোলার আঘাতে বাংলাদেশের মাটিতে মিশে যান।

নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মাতৃভূমির যুদ্ধ তরী 'পলাশ' কে বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়া বীর "রুহুল আমিন"। অন্যদের মতো তিনিও চাইলে শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে নদীতে লাফিয়ে বেঁচে যেতে পারতেন।

অথচ মাতৃভূমিকে রক্ষায় শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে মরাকেও তিনি সবচেয়ে বড় বাঁচা মনে করেছিলেন। যার লাশ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সবচেয়ে উদাসীন ভবঘুরে " বীরশ্রেষ্ঠ নূর মুহাম্মদ শেখ" ছেলেটাও মাতৃভূমিকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষার এমন পণ করে বসলো,পুরো সেক্টর ৮ এর সবাইকে বাঁচাতে গিয়ে সবাইকে পিছনে আগলে রেখে নিজের বুকটা সম্মুখে ঠেলে দিলো,যুদ্ধ করতে করতে হাসতে হাসতে শত্রুর গুলিতে শহীদ হয়ে গেলো।

পুরো ৯ মাস বীরের মত যুদ্ধ করে ৭ নাম্বার সেক্টরকে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন "অধিনায়ক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর"। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১ দিন আগে আর দেশের স্বাধীনতা দেখে যেতে পারলেন না এই বীর। শত্রুর গুলিতে নিজেই স্বাধীন হয়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।
একজন সিপাহী হয়েও অসীম বীরত্ব নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে

শত্রুদের আস্তানার ৫০ গজের মধ্যে চলে গিয়ে যিনি মুক্ত করে এনেছিলেন চৌকি ও তার সংলগ্ন পুরো এলাকা,তিনি "বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান",এবং সেখানেই তিনি শহীদ হয়ে যান।

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে স্বদেশকে মুক্ত করতে ছুটে যাওয়া ছেলেটির নাম "মোস্তফা কামাল"।
চাইলে সবার মত সেও সরে আসতে পারতেন। কিন্তু সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে একাই ফায়ার কাভারিং করে সকল সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষা করে মাতৃভূমির জন্য নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন এই বীর।

এমন সব আত্মদানের বিনিময়ে কেনা এই ভূখণ্ড। এই বাংলাদেশ। এ সকল বীরদের এক একটি আত্মত্যাগ এক একটি ইতিহাস।
৩০ লক্ষ মানুষের রক্তে ধুয়ে পবিত্র হওয়া এই মাটি। যে স্বপ্ন দেখে তারা প্রাণ উৎসর্গ করে গেছেন,সেই স্বপ্নপুরীতে এখন বাস শুধু এক একজন স্বার্থবাজের।

এই মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে আমরা তোমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমাদের ক্ষমা করো হে সকল বীরযোদ্ধা।

বিজয় হোক বিজয়ের।
মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

0/একটি মন্তব্য / মন্তব্য পোস্ট করুন