প্রভুর কাছে চিঠি

একজন গরীব লোক প্রতিদিন প্রভুর উদ্দ্যেশ্যে একটা করে চিঠি লিখতো আর বেলুনে বেধে আকাশে উড়িয়ে দিতো। চিঠিতে লিখতো ‘হে প্রভু’ আমি খুব অভাবে আছি, আমাকে এক লক্ষ টাকা দাও। টাকাগুলো দিয়ে ব্যবসা করে লাভ করবো। তারপর তোমার টাকা তোমার পথে ব্যয় করে ঋণ শোধ করে দিবো। লোকটির বাড়ি ছিলো স্থানীয় থানার পাশেই। চিঠিসহ বেলুন গুলো প্রতিদিন উড়ে গিয়ে পড়তো থানার মধ্যে। থানার পুলিশরা প্রতিদিন লোকটির চিঠি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তো আর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতো। তারা ভাবতো লোকটার মনে হয় টাকাটার খুব প্রয়োজন। তাই বিষয়টি ওসি সাহেবকে জানালো। ওসি সাহেবও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং নিজে কিছু টাকা দিলেন। আর থানার সকল পুলিশ সদস্যকে বললেন সাধ্যমতো নগদ কিছু সহযোগিতা করতে। তখন থানার সকল পুলিশ সদস্য মিলে টাকা তুলতে লাগলো। খুব চেষ্টা করে থানার সবাই মিলে পঞ্চাশ হাজার টাকা যোগাড় করে, সুন্দর একটা খামের মধ্যে করে টাকাগুলো সহ একজন পুলিশকে পাঠানো হলো লোকটার বাড়িতে। তারপর পুলিশ সদস্য লোকটাকে পঞ্চাশ হাজার টাকার প্যাকেটটি দিয়ে বললো– আপনার ডাকে মহান সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়ে আপনার জন্য এই টাকা পাঠিয়েছে। লোকটি টাকাগুলো পেয়ে অনেক খুশি হয়ে গেলেন। খুশিতে পুলিশ সদস্য কে লোকটি ধন্যবাদ দিতেও ভুলে গেলেন। কোন রকম পুলিশকে বিদায় দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে টাকা গুলো গুনতে লাগলো। গুনে দেখলো মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা। কিছুতেই কিছু বিশ্বাস করতে পারলো না, মহান প্রভু এভাবে অর্ধেক টাকা দিতে পারে। মনের দুঃখে পরের দিন লোকটা আবার একটা চিঠি লিখে বেলুনসহ উড়িয়ে দিল। এই চিঠি টিও প্রতিদিনের ন্যায় থানার মধ্যে এসে পড়লো। এদিকে চিঠি পেয়ে সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে চিঠিটি পড়ার জন্য ভিড় করলো। পুলিশ সদস্যরা স্বাভাবিকভাবে আশা করছে অবশ্যই লোকটি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছে। কিন্তু চিঠি পড়ে সবাই আশাহত হলো। চিঠিতে লেখা ছিল- প্রভু তুমি জেনে শুনে এতো বড় ভুল কেমনে করলে? টাকাটা যখন দিলেই, পুলিশের মাধ্যমে কেন দিলে ? শালারা অর্ধেক টাকা মেরে দিয়ে বাকি অর্ধেক টাকা আমাকে দিয়েছে। করোনাকালে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য এত পুলিশ জীবন দিয়েছে, হাজার হাজার পুলিশ করোনা আক্রান্ত হয়েছে। তার প্রশংসা কেউ না করলেও,অল্প একটু ত্রুটি পেলে পুলিশের দোষ নিয়ে হাত পাকানো অভ্যাস নেই এমন লোক পাওয়া বিরল। পুলিশের সেবার মান পরিবর্তন করার সাথে সাথে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করাটাও অতীব জরুরী। লেখক: মোঃ মহরম আলী মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বরগুনা জেলা।

0/একটি মন্তব্য / মন্তব্য পোস্ট করুন